ত্রিতাপ দুঃখ কি এবং কেন? এ থেকে মুক্তির উপায় কি? – Krishnokotha.com |
জড় জগতে জীব তিন রকমের দুঃখের অধীন। ১.আধ্যাত্মিক, ২.আধিভৌতিক ও ৩.আধিদৈবিক দুঃখ।
লোক শিক্ষার জন্য শ্রীল সনাতন গোস্বামী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে অত্যন্ত দীনতার সহিত জিজ্ঞেস করেছিলেন—
কে আমি’, ‘কেনে আমায় জারে তাপত্রয়’।
ইহা নাহি জানি– ‘কেমনে হিত হয়’।।
“আমি কে? কেন জড় জগতের তিনটি তাপ আমাকে নিরন্তর দুঃখ দেয়? আমি যদি তা না জানি, তা হলে কিভাবে আমার যথার্থ মঙ্গল সাধিত হবে?”
( সূত্রঃ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যলীলা, ২০/১০২ )
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে বলা হয়েছে—
“কৃষ্ণ ভুলি’ সেই জীব অনাদি-বহিমুর্খ।
অতএব মায়া তারে দেয় সংসার-দুঃখ।।”
“পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে জড়া প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে রয়েছে। তাই মায়া তাকে এই জড় জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে।”
( সূত্রঃ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যলীলা, ২০/১১৭ )
পূর্বে কোনকালে আমরা কৃষ্ণসেবা বর্জন করে সুখভোগের প্রতি মনোনিবেশ করেছিলাম তার ফলে মায়া-সুখ ভোগের উদ্দেশ্যে দুঃখময় জগতে পতিত হতে হয়েছে।
আরো জেনে রাখুন…..
#আধ্যাত্মিক দুঃখ হচ্ছে-দেহ ও মন জাত দুঃখ। যে জড় দেহটি ধারণ করে আমরা রয়েছি সেই দেহটি নানা ব্যাধি ব্যাথা বেদনার আকর। যার ফলে আমরা দুঃখ পাই। তারপর মনজাত দুঃখ–যেমন দৈহিক সম্বন্ধে সম্বন্ধিত আত্মীয় স্বজনের বিচ্ছেদ, মৃত্যুর কারণে দুঃখ। প্রিয় বস্তু হারানোর দুঃখ, অপ্রিয় বস্তুর সংযোগও দুঃখ।
#আধিভৌতিক দুঃখ হচ্ছে—অন্য জীবের দ্বারা প্রাপ্ত দুঃখ। যেমন বিষাক্ত পোকামাকড় জীব জন্তুর দংশন, চোর ডাকাতের উৎপাত, প্রতারকের ক্রিয়াকলাপ ইত্যাদি আমাদের দুঃখ প্রদান করে।
#আধিদৈবিক দুঃখ হচ্ছে—দেবতাদের দ্বারা সংঘটিত যে দুঃখ। ভূকম্প, ঝড়, প্রবল বৃষ্টি, বন্যা, প্রচণ্ড গরম, কনকনে ঠাণ্ডা, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি জনিত দুঃখ। প্রত্যেকেই কমবেশী এ সমস্ত দুঃখে মর্মাহত হয়। এই ত্রিবিধ দুঃখ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে হলে কৃষ্ণসেবা উন্মুখ মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে।
“সৌভাগ্যক্রমে সেই বদ্ধজীব যখন সাধুসঙ্গে এসে পারমার্থিক গুরুদেবের আনুগত্যে কৃষ্ণভক্তি অনুশীলন করতে শুরু করে, তখন তার ভবদশা থেকে উত্তরণের উপায় হয়।”
“সাধু-শাস্ত্র-কৃপায় যদি কৃষ্ণোন্মুখ হয়।
সেই জীব নিস্তারে, মায়া তাহারে ছাড়য়।।”
( সূত্রঃ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, মধ্যলীলা, ২০/১২০ )
দুঃখময় সংসারের পরপারে যাওয়ার জন্য শাস্ত্রের নির্দেশ রয়েছে—
“সাধুসঙ্গে হরিনাম এইমাত্র চাই।
সংসার জিনিতে আর কোন বস্তু নাই।।”
( সূত্রঃ শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত )